বিশেষ প্রতিবেদক :
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যার হিসাবে ঢাকা বিভাগকে ছাড়িয়ে গেল চট্টগ্রাম বিভাগ। সংক্রমণের হারও চট্টগ্রাম বিভাগে তুলনামূলকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। উল্টো ঢাকায় শনাক্তের হার অনেকটাই কমে আসছে ধারাবাহিকভাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগে মারা গেছে ১১ জন আর চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া গত এক মাসের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে শনাক্ত রোগীর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৭২.৯৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ছিল ১৪.৮৬ শতাংশ। ওই দিন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৬৩ শতাংশ আর চট্টগ্রামে ছিল ২৫.১৪ শতাংশ। এরপর ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে দেশে শনাক্তের মধ্যে ঢাকায় ছিল ৬২.৭৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে ছিল ২১.৪৫ শতাংশ। ওই দিন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৫৭.১৩ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ছিল ২৬.৬৪ শতাংশ। আর ১ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে দেশে শনাক্তের মধ্যে ঢাকায় ছিল ৫৯.১৬ শতাংশ আর চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ছিল ১৬.১২ শতাংশ। ওই দিন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৫০.৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ছিল ২৭.৬৭ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, এই দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে আট লাখ দুই হাজার ৬৯৭টি। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ১৯ জন (শনাক্তের হার ২১.৮৯ শতাংশ)। এটি দেশে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এই নতুন শনাক্তসহ এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত সংখ্যা এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ (শনাক্তের হার ১৯.১০ শতাংশ)। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে সর্বোচ্চ চার হাজার ৩৩৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪৪২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৩.৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছে এক হাজার ৯২৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১.২৬ শতাংশ। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। বয়স বিভাজনে ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে দুজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে দুজন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে আটজন, ৭১-৮০ বছরের মধ্যে সাতজন এবং ৮১-৯০ বছরের মধ্যে দুজন। হাসপাতালে মারা গেছে ৩৩ জন এবং বাড়িতে পাঁচজন।
গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় যারা মারা গেছে তাদের বয়স বিবেচনায় মৃত্যুর হার যথাক্রমে ষাটোর্ধ্ব ৪৩.৩১ শতাংশ (৮৩৪ জন), ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ২৯.০৮ শতাংশ (৫৬০ জন), ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১৪.৮০ শতাংশ (২৮৫ জন), ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৭.৫৮ শতাংশ (১৪৬ জন), ২১-৩০ বছরের মধ্যে ৩.৪৭ শতাংশ (৬৭ জন), ১১-২০ বছরের মধ্যে ১.১৪ শতাংশ (২২ জন) এবং ০-১০ বছরের মধ্যে ০.৬২ শতাংশ (১২ জন)।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরীক্ষা বিনা মূল্যে : গতকাল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কভিড-১৯ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফির হার নির্ধারণ করেছে। এসংক্রান্ত পরিপত্র অনুসারে, বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনার ক্ষেত্রে দুই শ টাকা, বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনার ক্ষেত্রে পাঁচ শ টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনার ক্ষেত্রে দুই শ টাকা পরীক্ষার ফি দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে ‘চিকিৎসা সুবিধা বিধিমালা’ ১৯৭৪-এর আওতায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনা চিকিৎসাসংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও গরিব রোগীদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসংক্রান্ত সরকারি আদেশ বহাল থাকবে। সব সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে উল্লিখিত হারে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বা পরীক্ষাগারে যাঁরা পরীক্ষা করছেন তাঁরা বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে এক হাজার টাকা নেবেন এবং পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা (একসঙ্গে সাড়ে চার হাজার টাকা) নেবেন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা দিলে পরীক্ষার ফি শুধু সাড়ে তিন হাজার টাকা নিতে হবে। আরো একটি নির্দেশনায় সব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক এবং সব জেলা হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানানো হয়েছে, যে স্থানে নমুনা সংগৃহীত হবে সেই স্থানে এই সরকারি ফি ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে এবং পরিপত্রে সরকারি কোষাগারের যে নম্বর দেওয়া আছে (১-২৭১৫-০০০০-১৮৬৩) সেই নম্বরে জমা হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি অ্যাপ তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। এই অ্যাপ তৈরি হলে এর মাধ্যমে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। কিন্তু যেসব বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সরকারি পরীক্ষাগারে জমা দিচ্ছে সেই পরীক্ষাগারে সরকার নির্ধারিত অর্থ হস্তান্তর করবে এবং অবশ্যই ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হবে ও সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত চিত্র
১৪ দিন পরে পরীক্ষার দরকার হবে না
বুলেটিনে বলা হয়, করোনা পজিটিভ হিসেবে ফল আসার পর ১৪ দিনে অনেকেই সুস্থ হয়ে গেলেও কাজে ফিরতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যে কেউ কভিড-১৯ পজিটিভ হলে তিনি অবশ্যই ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন এবং লক্ষণ-উপসর্গমুক্ত হলে তিনি আরো ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থেকে স্বাভাবিক কাজে ফিরবেন। যদিও ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি আটলান্টা এই সময়টিকে ১০ দিন বলেছে, তবু অতিরিক্ত সতর্কতা বিবেচনায় বাংলাদেশে ১৪ দিন বলা হচ্ছে। সুতরাং যারা নিয়োগকারী সংস্থা-কর্তৃপক্ষ, তারা এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাদের কভিড-১৯ পজিটিভ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফিরতে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে আর কোনো পরীক্ষার দরকার হবে না।
হাসপাতাল চিত্র
বুলেটিনে জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীতে কভিড রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা আছে ছয় হাজার ৭৫টি এবং আইসিইউ শয্যা আছে ১৪৫টি। সব বিভাগ মিলিয়ে সাধারণ শয্যা আছে ১৪ হাজার ৭৭৫টি এবং আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯২টি। এসব হাসপাতালে সর্বমোট অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১১ হাজার ১৪১টি ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে ২০৭টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৯৮টি। সারা দেশে সাধারণ শয্যায় ভর্তি করা রোগী চার হাজার ৬২৮ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তি করা রোগী ২১০ জন। সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি করা রোগী ৫১৮ জন এবং ছাড়প্রাপ্ত রোগী ৭৩৬ জন।