ভোগের মধ্যে নয় ত্যাগের মধ্য দিয়েই শান্তি : ছাত্রলীগের উদ্দেশে শেখ হাসিনা

image-340082-1598892124.jpg

ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বিশেষ প্রতিবেদক::

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র ধারণ করে তোমরা এগিয়ে যাবে, সেটাই আমি চাই। ত্যাগের মধ্য দিয়েই শান্তি, ভোগের মধ্যে না। এই কথাটা সব সময় মনে রাখবে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে যদি চল, দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারবে।’ জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে সোমবার (৩১ আগস্ট)  আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছু নিয়ে যাননি। যারা ১৫ অগাস্টে শাহাদাত বরণ করেছেন, কাউকেই কিন্তু কোনো কাফন-দাফনও দেওয়া হয়নি, জানাযাও দেওয়া হয়নি। যেহেতু আমার বাবার লাশটা টুঙ্গিপাড়ায় নিয়েছিল, সেখানে মাওলানা সাহেব এবং যারা আশেপাশে ছিলেন, তারা জোর করেছিল বলে তাকে একটু গোসলের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু কাফনের কাপড় সেটা কেনার মতো সেখানে দোকানও ছিল না, খোলাও ছিল না,কারফিউ দেওয়া হয়েছিল। সেই রেডক্রস হসপিটাল, আমার দাদির নামে একটা হসপিটাল করা হয়েছিল, সেখানে বেশ কিছু কাপড় রাখা ছিল। সেখান থেকে কয়েকটা কাপড় নিয়ে এসে সেই রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিড়ে সেই কাপড় দিয়েই আমার বাবাকে কাফন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি তার গরিব মা,গ্রামের মানুষ,দরিদ্র মানুষ, তাদের যেটুকু দিতে পারতেন সেই কাপড়টা জড়িয়েই কিন্তু তিনি চলে গেছেন। বাংলার মানুষের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যাননি। দিয়েই গেছেন। রক্তটাও দিয়ে গেছেন।”

মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

বিদেশে অবস্থান করায় ওই সময়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। মাত্র দুই মাসের জন্য আমাদের যাওয়া। তারপর আমরা শুনলাম আমাদের কেউ নেই। আমরা নিঃস্ব, সব আমাদের শেষ। বিদেশে আমাদেরকে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হল। ছয়টা বছর পর যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করলে, আমি ফিরে এলাম।’

জিয়াউর রহমানের শাসনামল দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকতে না পারার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন তার কাছ থেকে বার্তা নিয়ে তা ছাত্রলীগকে পৌঁছে দিতেন আমার মা। সব সময় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করা, ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করা এবং ছাত্রলীগের মাধ্যমেই আমার বাবা যেই বার্তাগুলো দিতেন জেলখানা থেকে সেগুলো পৌছে দেওয়া সেই কাজটাই তিনি খুব সুচারুভাবে করে দিতেন। প্রয়োজনে তিনি নিজে বোরখা পরে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে দেখা করার জন্য, নেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশেষ করে ছয় দফা দেবার পর যখন ৭ই জুনের হরতাল সেই হরতালের যেই আয়োজন সেই আয়োজন করবার জন্য এবং এই আন্দোলনটাকে গড়ে তোলা। সমস্ত কাজগুলো তিনি করেছিলেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মাকে দেখেছি যে, রাজনৈতিকভাবে তার সিদ্ধান্ত নেবার অসীম ক্ষমতা ছিল। কারণ তিনি বুঝতে পারতেন যে মানুষের অবস্থানটা কোথায়, মানুষ কী চায়? যে কারণে প্রতিটি সময় একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অটল ছিলেন।”

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়কও উন্মোচন করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।

scroll to top