নগর প্রতিবেদক ::
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনের কিছু বিষয় স্পষ্ট করে গতকাল ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্রটি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। পরিপত্রে কোনো প্রার্থী ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী হয়ে অন্যূন দুই বছর দণ্ডিত হলে এবং ওই দণ্ড দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হলেও আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বা সাজা স্থগিত না করলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। উচ্চ আদালত আপিল গ্রহণ করলে, বা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামিন পেলেও অযোগ্য হবেন। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। আর এমন দণ্ড প্রাপ্তরা মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত অযোগ্য হবেন।
স্বপদে থেকে নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, শুধু পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলররা স্বপদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। অন্য কোনো স্থানীয় সরকার পরিষদ সদস্যরা স্বপদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থনযুক্ত তালিকার বিষয়ে বলা হয়, এর আগে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন-এমন কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। নতুনদের ক্ষেত্রে ১০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে। কোনো সমবায় সমিতি এবং সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য হবেন না। তবে পৌরসভার সঙ্গে সম্পৃক্ত চুক্তির ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।
এ ছাড়া বাস্তবায়নাধীন/চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকাদাররা নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। তফসিল ঘোষণার পর ঠিকাদারী হস্তান্তর করলে বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পরিবর্তন করলেও সংশ্লিষ্ট পৌরসভা নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। তবে অনেক আগে কাজ করতেন কিন্তু বর্তমানে করেন না- এমন ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন না। এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা স্বীয় পদে থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সরকারি চাকরি হতে ইস্তফা দেওয়ার দরখাস্ত দাখিল করলেই তা ইস্তফা বলে বিবেচিত হবে না। পেনশনভুক্তরা নির্বাচনে যোগ্য হবেন। তবে সরকারি চাকরি হতে অব্যাহতি নিলে তিন বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। পিআরএল চাকরির অংশ নয় বিধায় পিআরএল-এ থাকলে নির্বাচনে যোগ্য হবেন।
এ বিষয়ে ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রার্থী হওয়া যায় না। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সারা দেশে ৩২৯টি পৌরসভা ধাপে ধাপে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এরই মধ্যে গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এসব পৌরসভায় আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোটের তফসিল দেয় কমিশন। এতে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ২২ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ২৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ১৬ জানুয়ারি। গত ১৩ ডিসেম্বর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। এ ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ৩ জানুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ জানুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ৩০ জানুয়ারি। আগামী সপ্তাহে চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।