বিশেষ প্রতিবেদক ::
বাঙালির জীবনে আজ এলো উদযাপনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপনের সঙ্গে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। এক কথায় কাঙ্ক্ষিত দুই লগ্ন এসে মিশেছে এক বিন্দুতে।
আজ বুধবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিনে শুরু হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপনের ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালা। যা ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে শেষ হবে।
এই দুই উপলক্ষ উদযাপনে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানকে আরও রাঙাতে যোগ দেবেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালার প্রথম পাঁচ দিনের আয়োজনে তারা সশরীরে অংশ নেবেন।
বাকী পাঁচদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কেউ থাকবেন না। তখন শিল্পীদের গান পরিবেশনায় মুখর থাকবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড। টেলিভিশন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হবে এ অনুষ্ঠান।
এ দুই উৎসবকে ঘিরে গোটা রাজধানীকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টানানো হয়েছে অগণিত ব্যানার-ফেস্টুন। আলোকসজ্জা আলোকিত বিভিন্ন ভবন।
১০ দিনের আয়োজনের প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত অবদান রেখেছেন সেগুলো যতটুকু সম্ভব তুলে ধরা হবে বলে জানান জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। ১৬ মার্চ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মেলবন্ধনে ‘অনন্য সময়’ পার করছে বাংলাদেশে।
বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য সেই স্বপ্নযাত্রার আরেকটি পর্যায়ের সঙ্গে মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধন আমাদের শ্রদ্ধার, আমাদের ভালোবাসার মেলবন্ধন, আমাদের অগ্রগতির মেলবন্ধন। ১০ দিনের যে প্রোগ্রামটা সাজানো হয়েছে, সেখানে প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, ও তার অবদানগুলো তুলে ধরা হবে। ’
আজ বুধবার সারাদেশে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণেও থাকবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমণ্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে। প্যারেড গ্রাউন্ডের মূল আয়োজনের সূচনা হবে বিকাল ৪টায়। আলোচনাপর্ব শেষে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির প্রধান আসাদুজ্জামান নূর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। ১০ দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মত শিল্পী ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণ থাকছে।
জানা গেছে, বুধবারের সাংস্কৃতিক আয়োজনে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মমতা শংকরের দল ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবর’সহ কয়েকটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করবে।
আসাদুজ্জামান নূর আরও জানান, আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ১০ দিনের আয়োজনের সূচনা হবে।
এরপর মুজিববর্ষের থিম সংয়ের মিউজিক ভিডিও পরিবেশনার পর বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও প্রচার করা হবে। এরপর স্বাগত সম্ভাষণ জানাবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
প্রচারিত হবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগার ধারণ করা ভিডিও বার্তা।
চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর যে আবক্ষ ভাস্কর্য হস্তান্তর করেছেন, তার ভিডিও দেখানো হবে অনুষ্ঠানে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর বক্তব্যের পর প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা পর্ব শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক আয়োজনে দেশীয় শিল্পীদের পাশাপাশি একটি বড় অংশজুড়ে থাকবে ভারতের শিল্পীদের পরিবেশনা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত অডিও-ভিজ্যুয়ালে ফুটে উঠবে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়।
অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সঙ্গে গান পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকী চিঠি উৎসর্গ, ‘মুজিব শতবর্ষের কার্যক্রম ফিরে দেখা’ শীর্ষক ভিডিও দেখানো হবে এ সময়।
এ পর্বে পরিবেশিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সব গান। সংগীত পরিবেশন করবেন সাদি মোহাম্মদ, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শিমূল ইউসূফ। তারা শোনাবেন ‘জাত গেল জাত গেল’, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তব একলা চল রে, ধনধান্য পুষ্প ভরা’সহ কয়েকটি সমবেত গান।
বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধু রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকছে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের নেতৃত্বে একটি বিশেষ পরিবেশনা। বর্ণিল আতশবাজি ও লেজার শোর মাধ্যমে রাত ৮টায় শেষ হবে প্রথম দিনের আয়োজন।