বিশেষ প্রতিবেদক ::
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন স্থানীয় সাংসদ ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের তার আধাসরকারি পত্রে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা উপকূলবর্তী সন্দ্বীপ চ্যানেলের আওতাভুক্ত এলাকায় সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের অনুরোধ জানান। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি জানা গিয়েছে।
নৌ-পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নৌ-প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটা ডিও লেটার দিয়েছেন। এটার বিস্তারিত আমরা বলতে পারছি না। তবে ওই অঞ্চলে সমুদ্রবন্দর হওয়া উচিত বলে তারা মনে করছেন। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। আমরা বিষয়টি প্রসেস করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।
ডিও লেটারে ওবায়দুল কাদের বলেন, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনী জেলার সোনাগাজী সমুদ্র উপকূলবর্তী উপজেলা। বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ দিয়ে ছোট ও বড় ফেনী নদী মেঘনা হয়ে ভোলা জেলার দিকে প্রবহমান। বিআইডব্লিউটিএর নদী জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাগাজীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে নদী দেড় হাজার মিটার থেকে ২ হাজার ৩০০ মিটার প্রস্থ, এখানে গভীরতা ৭-৮-১০-১২ মিটার। শীতকালে কোথাও কোথাও ১৪ মিটার পানি থাকে। এখানে নদী চওড়া হওয়ায় ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার লম্বা দুটি জাহাজ পাশাপাশি অনায়াসেই চলাচল করতে পারবে এবং প্রতি বছর নদী ড্রেজিংও করতে হবে না। উল্লেখ্য, সরকারের সোনাগাজী-মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর বা এর সন্নিকটে একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
চিঠিতে জনস্বার্থে বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছাকাছি সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি সমুদ্রবন্দর হলো চট্টগ্রাম ও মোংলা। সর্বশেষ পটুয়াখালীতে চালু হয়েছে পায়রা বন্দর। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে সোনাদিয়ায় আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজেও নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, নোয়াখালীতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। নোয়াখালীর ওই চ্যানেলে বন্দর করা হলে ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল আরো গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা সংকটে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ প্রবেশে যে অসুবিধা হয়, সে রকম কিছু এখানে হবে। কোম্পানীগঞ্জের উপকুলে বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর স্থাপন হলে এটি দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের চাহিদা পূরণ করবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, নোয়াখালীতে একটি বিমানবন্দরও হবে। এজন্য আগেই জায়গা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এছাড়া সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও হবে। আর এখানে যেহেতু সমুদ্রের চ্যানেল রয়েছে, তাই পোর্ট করা গেলে তো আরো বেশি কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-কারখানা নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ওই অঞ্চলে এখনো তেমন শিল্পায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
এছাড়া জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন জেলার জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নতুন করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে।
ব্রিটিশ আমলেও এ অঞ্চলের যোগিদিয়িয় সমুদ্রবন্দর চালু ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। এছাড়া এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা চলছে। কোম্পানীগঞ্জে নতুন করে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লার বাসিন্দারা এর সুফল পাবেন। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে মালামাল পরিবহনের সময়ও কমে যাবে। ফলে এ অঞ্চলের শিল্পায়নও নতুন করে গতি পাবে।