আরও তিনটি তারিখ নিয়ে আলোচনা, তফসিল হতে পারে ১২-১৩ নভেম্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক ::
নির্বাচনের তফসিল নিয়ে দুই ধরনের চিন্তা রেখেছে ইসি। প্রথম তফসিল দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তা আবারও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ কারণে ভোটের জন্য তিনটি তারিখ চিন্তায় রেখেছে কমিশন। প্রথমত, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে এ তারিখ আবার পরিবর্তন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, জানুয়ারি ৭ তারিখ ভোট গ্রহণের চিন্তায় রয়েছে। তৃতীয়ত, ৯ অথবা ১১ জানুয়ারিও ভোট গ্রহণের সম্ভব্য তারিখ রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভব্য তিনটি তারিখ ধরেই নির্বাচনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আনুষ্ঠানিক সভা করে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ হতে পারে বলে বঙ্গভবনসূত্র জানিয়েছেন। ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাতের প্রাথমিক তারিখ থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে।
ইসিসূত্র জানিয়েছেন, সবকিছু নির্ভর করছে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভার ওপর। কমিশন সভায় নতুন তারিখও নির্ধারণ হতে পারে। ইসিসূত্র জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনের এ তিনটি তারিখের প্রস্তাব কমিশন উপস্থাপন করবে। পরে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে সেই তারিখ চূড়ান্ত হবে। তবে ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের যখন প্রাথমিক তারিখ ছিল, তখন কমিশন সভার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ৬ নভেম্বর। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ পিছিয়ে যাওয়ায় কমিশন সভাও পিছিয়ে যাচ্ছে। ১২ নভেম্বর কমিশন সভা হতে পারে। ওইদিন নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হতে পারে। তবে কোনো কারণে ওইদিন সভা না হলে ১৩ অথবা ১৪ তারিখে কমিশন সভা হবে। নভেম্বরের শুরুর দিকে সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মধ্য নভেম্বরে ভোটের তারিখ তথা নির্বাচনি সূচি ঘোষণা করবে কমিশন। তবে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের দিন নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার তারিখও জানিয়ে দিতে পারে কমিশন। আর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির শুরুতে। সূত্র জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ একটা ফরমালিটি। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এজন্য ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এর এক সপ্তাহ পর ৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এর এক সপ্তাহের মাথায় ২৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। সে ক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনি কার্যক্রমে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধাদান ঠেকাতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জামানতের টাকা পরিশোধের সুযোগও থাকবে। অন্যদিকে ভোট কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর খুঁজে পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করছে কমিশন।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ৬০ দিন, দ্বিতীয়ে ৫৪ দিন, তৃতীয়ে ৪৭ দিন, চতুর্থে ৬৯ দিন, পঞ্চমে ৭৮ দিন, ষষ্ঠে ৪৭ দিন, সপ্তমে ৪৭ দিন, অষ্টমে ৪২ দিন, নবমে ৪৭ দিন, দশমে ৪২ দিন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৬ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রথম থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। সবশেষ নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ও ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর।