তৃণমূলে তাদের গুরুত্ব বাড়ছে
স্টাফ রিপোর্টার
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বিস্তৃত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বলা যেতে পারে, তৃণমূল নেতাকর্মী বিমুখ হয়ে পড়েছেন এদের কেউ কেউ। করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ভয়ে অনেকে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে বিবৃতি বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে করোনার মধ্যেও মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থেকে সরাসরি মাঠ নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এর ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গুরুত্ব বেড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা যায়।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, করোনার ছোবল প্রকোপ আকারে ধারণ করলে মাঠ পর্যায়ে অনেক নেতাই হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। অনেক নেতাকেই ফোন দিয়েও পাওয়া যায় না। ফলে সঠিক নির্দেশনার অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে করোনা প্রকোপের মধ্যেও কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা সরাসরি মাঠে সক্রিয় থেকে তৃণমূল নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করছেন মাঠ নেতাদের। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের মাঠ রাজনীতি সচল অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে। উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা। এর ফলে করোনা পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক মাঠে ও দলে আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতারা গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে পেরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, করোনা সংকটকালে মাঠ নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। দল ও দেশের দুঃসময়ে সংগঠনকে সচল ও শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন দলের দুঃসময়ে এই নেতা। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় নেতাদের খোঁজখবর রাখছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে বিরাজমান সাংগঠনিক অচলাবস্থা কমিয়ে আনতে যা বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
তৃণমূল নেতারা বলেন, গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের মধ্যে সারা দেশে মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল দেখা দিয়েছিল তা নিরসন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের চার কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর করির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। সে সময় হেভিওয়েট নেতারা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময়পার করার ফলে দলে সংগঠনিক যে শূন্যতার তৈরি হয়েছিল তা নিরসনে এই চার নেতা কাজ করেছিলেন। চার নেতার অন্যতম অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মূল দল আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি সরাসরি নিজেই তত্ত্বাবধান করছেন। নানকের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে মাঠে দেখা যাচ্ছে দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমানকে। তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এছাড়াও তাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে এ মুহূর্তে দল এবং সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দলের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজ বাসভবন থেকে খুব একটা বের হচ্ছেন না। তবে গণমাধ্যম বা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বহু প্রভাবশালী নেতা মাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই করোনার ভয়ে বিধ্বস্ত হয়ে নিজ বাসায় থাকছেন। ফলে এমন সময়ে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন ত্যাগী ওই নেতারা। প্রায় প্রতিদিনই দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকে তাদের এসব কর্মকান্ডে দলের মাঝে তাদের গুরুত্ব বেড়েছে ব্যাপক হারে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের করোনা সংকটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। তৃণমূলের নেতারা জানান, মহামারি করোনাভাইরাস কারণে অনেক প্রভাবশালী নেতা মাঠে অনুপস্থিত, তখন দলের এসব নেতারা তৃণমূলকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাহস পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার ফলে তাদের সামাজিক কর্মকান্ডে জনগণও সম্পৃক্ত হচ্ছেন।