দেশে বন্যা পরিস্থিতি আবারো অবনতির দিকে, চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন লাখো মানুষ

Banna.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক আবহাওয়া মডেলের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও অপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫৭টি বাড়ছে, ৪২টিতে কমছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি স্টেশনের পানি। তার মধ্যে ৪টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট অংশে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সুরমার সুনামগঞ্জ অংশে ১৭ সেন্টিমিটার, জাদুকাটার লরেরগড় অংশে ২৩ সেন্টিমিটার এবং গুড় নদীর সিংড়া অংশে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে দেশের ১৪টি জেলার নদ-নদীতে সদ্য বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ফের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদীর পানি ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে বন্যার পানি কমলেও যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের পানি সরে না যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন জামালপুরের লাখো মানুষ। এসব এলাকার মানুষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থেকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করলেও এখন পর্যন্ত কোনও ত্রাণ সামগ্রী পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিনমজুর ও নিম্নআয়ের পরিবারগুলো। কাজ না থাকায় দু’বেলা খাবারও মিলছে না তাদের। চারণভূমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে গোখাদ্যেরও।

ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের খামারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে ঘরবাড়ি মেরামত করছেন স্থানীয়রা। সেখানকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার জানান, অনেকদিন বন্যা কবলিত থাকার পরও কোন জনপ্রতিনিধি খোঁজ নেয়নি তাদের। পানি কমায় বাড়ি ফিরেছেন তারা। বাড়িঘর সংস্কার করার মতো উপায়ও নেই। তাই সরকারি সহায়তা কামনা করছেন। বন্যার পানির স্রোতে কাঁচা-পাকা অনেক রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহনেও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকার মানুষ।

বন্যায় জামালপুরে এ পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার আংশিক কাঁচা রাস্তা এবং ১৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সাদেকুজ্জামান। অন্যদিকে মাদারগঞ্জের পাকরুল এলাকায় যমুনার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয়রা।

scroll to top