নিজস্ব প্রতিবেদক ::
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে মৌলবাদীদের বিরোধিতা নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশকে কখনো আলাদা করা যায় না। এই দেশে ভাস্কর্য আছে ভাস্কর্য থাকবে। ভাস্কর্য থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্ধারণ করবে সরকার। ঐ মৌলবাদীদের যারা ধর্মের নামে ধর্মবিরোধী কাজ করে তাদের হাতে ভাস্কর্য থাকা না থাকার ইজারা কিন্তু এ দেশের জনগণ দেয়নি।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সোমবার ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে ইউএস এইড ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ আয়োজনে ‘মেল এনগেজমেন্ট ফর জেন্ডার ইক্যুয়ারিটি: সাসটেইনড ইমপ্যাক্ট এন্ড চেঞ্জেস ইন সাউথ ওয়েস্ট বাংলাদেশ ‘ ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইরাক, ইরান, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কসহ মুসলিম প্রধান অনেক দেশেই কিন্তু আমরা ভাস্কর্য দেখি। মৌলবাদী দলগুলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার যে হুমকি দিয়েছে তা অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, তাদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানান তিনি।
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, যারা মসজিদ-মন্দির আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে, ধর্মবিরোধী কাজ করে, বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লি ও চলন্তবাসে জ্বলন্ত আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে ধর্মের কথা মানায় না। যারা স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না তারাই ভাস্কর্য নিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। প্রতিমন্ত্রী হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগ ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশের মাটিতে মৌলবাদীদের স্থান হবে না।
ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিভিশন অব নেচার এনালাইসিস করে দেখা যায় পুরুষেরা উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসাবে সমাজে গণ্য হয়ে থাকে। নারীরা গৃহস্থলির কাজ করে তবে তাদের কাজের মূল্যায়ন হয় না। নারীরা যেমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাহিরে কাজ করছে পুরুষদেরও তেমন ঘরের কাজ করা উচিৎ। যে পরিবারের স্বামী-স্ত্রী একসাথে কাজ করে সেখানে আর্থিক সমৃদ্ধি হয়। যার মাধ্যমে নারীরা ক্ষমতায়িত হয়।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেশ বার্টলেটের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য করেন ইউএন উইমেন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিভ শোকো ইশিকাঊয়া ও ইউএস এইডের বাংলাদেশে মিশন ডিরেক্টর ডেরিক এস ব্রাউন, প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ইউএস এইড বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট মাহমুদা রহমান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন। এ ছাড়া গবেষক, দেশী-বিদেশী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
ওয়ার্কশপের উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধের উপর আলোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবযাত্রা প্রকল্পটি খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে সেখানে পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ঘরের বাইরে নারীর কাজে অংশগ্রহণ ও বাল্য বিয়ে বিষয়ে ইতবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ৯ হাজার ৮ শত ১৪ জন দম্পতির মধ্যে ৮৯.৩৫ শতাংশ পুরুষ মনে করে পরিবারে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। যা বেজলাইন সার্ভে ছিল ৪৩.৩০%। ৪৪.১৬ শতাংশ পুরুষ মনে করে কাজের জন্য ও জরুরী প্রয়োজনে নারীদের বাড়ির বাইরে যাওয়া স্বাভাবিক। যা বেজলাইন সার্ভে ছিল ১৮.৩০%। ৯২.৬৫ শতাংশ পুরুষ মনে করে গৃহস্থলি কাজে পুরুষদেরও সহায়তা করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে আরো বড় পরিসরে কাজের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের ক্ষমতায়েন ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি। নারী যত দ্রুত সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িতা হবে তত দ্রুত দেশের উন্নয়ন সাধিত হবে।