বিশেষ প্রতিবেদক :
ভুতুড়ে বিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) । অন্যদিকে শনিবার ( ৪ জুলাই) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যানের দফতর থেকে বলা হয়েছে, রবিবার ( ৫ জুলাই) সকালের মধ্যে দায়ীদের নামের তালিকা না পাঠালে জেনারেল ম্যানেজাররা দায়ী বলে ধরে নিয়ে তাদেরকেই শোকজ করা হবে।
এর আগে ভুতুড়ে বিলের তদন্তে এক নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এছাড়া ৩৬টি এনওসি (স্থানীয় কার্যালয়) এর প্রত্যেকটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিয়েছে তারা। বদলি করা হয়েছে দুই চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে। অন্যদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি’র (ডেসকো) দুই মিটার রিডারকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি শোকজ করা হয়েছে ৭ জনকে।
ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত টাস্কফোর্সের নিদেশে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আগামীকাল রবিবার ( ৫ জুলাই) দুপুর ১টায় এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকো ভুতুড়ে বিলের কারণে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্ট্যান্ড রিলিজ, দুই মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম মিডিয়াকে বলেন, বিল বেশি আসার প্রেক্ষিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। একইসঙ্গে যাদের অতিরিক্ত বিল এসেছে তাদের সকলের বিল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দায়ী একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। দুজন মিটার রিডারকে আমরা বরখাস্ত করেছি। আর বদলি করেছি বেশ কয়েকজনকে। কতজন বদলি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও কাজ শেষ করিনি ফলে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী সোমবার আমাদের গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। এরপর আমরা বিস্তারিত বলতে পারবো।
এদিকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ২২৩ জনকে শোকজ করেছে। ওজোপাডিকো শনিবার তাদের অধীন ২১ জেলা গ্রাহকদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করেছে। কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী আবুল হাসান মিডিয়াকে বলেন, আমাদের ৫৫৬ জনের অতিরিক্ত বিল এসেছে। আমরা গ্রাহকদের অনলাইন বৈঠকে বলেছি কারও কোনও সমস্যা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরা বিলগুলো ঠিক করে দেব। আর যে ৫৫৬ জনের অতিরিক্ত বিল এসেছে সকলের বিল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন মিডিয়াকে বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে ২২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ করেছি। তিনি বলেন, বড় ধরনের অনিয়ম হয়নি। আমরা অন্যদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। তাই আগে শোকজ করা হয়েছে। এরপর তাদের ব্যাখ্যা পেলে ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে আরইবি সূত্র বলছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীন সমিতিগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ এবং বিল আদায় করে। প্রতিটি সমিতিই আলাদা ভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি সমিতির হিসেবও আলাদা। সঙ্গত কারণে আরইবি সমিতিগুলোকে দায়ী ব্যক্তিদের বের করে দিতে বললেও তারা তা দিচ্ছে না। বরং সমিতির জেনারেল ম্যানেজাররা দায়ী ব্যক্তিদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্য শনিবার বিকেলে আরইবির চেয়ারম্যানের দফতর থেকে বলা হয়েছে, রবিবার সকালের মধ্যে দায়ীদের নামের তালিকা না পাঠালে জেনারেল ম্যানেজাররা দায়ী বলে ধরে নিয়ে তাদেরকেই শোকজ করা হবে।
জানতে চাইলে আরইবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন মিডিয়াকে বলেন, আমরা গতকাল এবং আজকেও এসব বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছি। দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। এজন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমদের দায়ী ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। যদি তারা তালিকা না পাঠায় তাহলে তাদেরকেই দোষী বলে ধরে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পরপর তিন মাস সারাদেশের গ্রাহকরা ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিল। যাতে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে বিদ্যুৎ বিভাগ। সেই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হলো। রবিবার সরকার গঠিত টাস্কফোর্স বিদ্যুৎ বিভাগে প্রতিবেদন জমা দেবে। দুপুর ১টায় এ বিষয়ে একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।