স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত রাজধানীর ৪৫ রেড জোনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তিন দিনের ব্যবধানেই একটি এলাকায় সর্বোচ্চ ১২৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওইসব এলাকায় করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও হুমকির মধ্যে পড়ছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, রেড জোন ঘোষণার পরও ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়েনি। আগের মতোই প্রায় স্বাভাবিকভাবেই সব কার্যক্রম চলছে। আর সরকারের পক্ষ থেকেও ওইসব এলাকায় জোনভিত্তিক লকডাউনও গতকাল পর্যন্ত করা হয়নি। যে কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে গত ৯ জুন মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে জোনভিত্তিক লকডাউন করা হয়। লকডাউন শুরু হওয়ার পরও প্রথম দিকে পূর্ব রাজাবাজারে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। লকডাউনের পর প্রথম তিন দিনে নতুুন করে আরও ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়। গত ১৭ জুন পর্যন্ত নতুুন আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৪ জন। পূর্ব রাজাবাজারের বাইরের অংশেও বেড়েছে নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা। একমাত্র রেড জোন ঘোষণার পর প্রথম তিন দিনে নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। অন্য সব এলাকাতেই নতুন ব্যক্তির করোনায় শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন এ প্রসঙ্গে সমকাল বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলবে ততদিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এই রোগ যাতে না হয় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে- সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এসব মানলেই দ্রুত এই রোগের সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। অন্যথায় সংক্রমণ বাড়তে থাকবে।
জানা যায়, গত ১৩ জুন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটি। ১৩ জুনের আগের ১৪ দিনে প্রতি লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ জন করোনা রোগী থাকার ভিত্তিতে এই রেড জোন চিহ্নিত করা হয়। এরপর থেকেই এসব এলাকায় জোনভিত্তিক লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমন খবর আসে
গণমাধ্যমে। লকডাউন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পাড়া-মহল্লাতেও। সংশয়ে পড়েন রেড জোন চিহ্নিত এলাকার মানুষ। কার গলি বা মহল্লা লকডাউনের আওতায় পড়বে এ নিয়েই মূলত সংশয়। কারণ এখনও এলাকা নির্দিষ্ট হয়নি।
রেড জোন চিহ্নিত এলাকাগুলোর নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে গত ১৩ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি নতুন আক্রান্ত হয়েছে মিরপুর এলাকায়। তিন দিনে ১২৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরায় ৬০ জন ও মোহাম্মদপুরে ৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আটটি এলাকার প্রতিটিতে ২০ জন থেকে ৪২ জন পর্যন্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১৩ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্নেষণ করে সংক্রমণের এ চিত্র পাওয়া গেছে। আইইডিসিআর গত শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাদের ওয়েবসাইটে ১৬ জুন পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হালনাগাদ করেছে।