কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির দলীয় রাজনীতিতে একযুগ এগিয়ে গেলেন ফখরুল, বিএনপি ও জনগণের মাঝে সফট কর্ণার ফখরুলের দিকে, সর্বত্র ঘৃনীত হচ্ছে মওদুদ

FM.jpg

বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ।।

প্রবাদ আছে সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। একমিনিটের ভুল সিদ্ধান্তে কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপি নেতা ফখরুলকে একযুগ এগিয়ে দিলো কামাল চৌধুরীর হটকারী সিদ্ধান্ত। অরাজনৈতিক ব্যক্তি, অল্পবিদ্যার কামাল চৌধুরীর একটির ভুল সিদ্ধান্ত মওদুদ আহমদের একসময়ের রাজনৈতিক মিত্র সর্বোচ্চ ডোনার, মওদুদ আহমদ নিজ হাতে যে ফখরুলের মনোনয়ন জমা দিলেন সেই ফখরুলের স্থানীয় বাসা ভাঙচুর করে মওদুদ আহমেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ধ্বংশ করে দিলো। এতদিন যারা বলত মওদুদ আহমদের মত সিনিয়র মানুষের সাথে ফখরুলে প্রতিযোগিতা ঠিক নয়। তারাই এখন বলতে শুরু করেছে ফখরুলের মত একজন সমাজসেবকের বাড়ি ভাঙচুর করে ঠিক করেননি মওদুদ পন্থীরা।

জনাব ফখরুল ইসলাম ও ফখরুলের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেয়ার কামাল চৌধুরীর রেজুলেশন

বাড়ি ভাঙচুরের ফলে রাজনৈতিক সিম্পিতি ফখরুলকে রাজনীতিতে একযুগ এগিয়ে দিলো। প্রবাদ আছে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। এখানেই হেরে গেলো মওদুদ।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বিএনপি নেতা ফখরুলের বাড়ীতে মওদুদ গ্রুপের হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ফখরুলের বাড়ি ও একটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে। ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ২০০৪ সালে বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলামের বসুরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর থেকে কোম্পানীগঞ্জের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ এহেন হটকারি উদ্যোগকে মওদুদ আহমদের জীবনের বড় কলঙ্ক মনে করছে।

বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলামের কোম্পানীগঞ্জ সদরে বসুরহাটের বাসা ভাঙচুর করে মওদুদ পন্থী বিএনপি

সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে মওদুদ আহমদের আপনজন মোটা অংকের ডোনার বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মওদুদ বিরোধী অংশকে সাপট করার পর কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির রাজনীতি স্পস্টত দুইভাগ হয়ে যায়।

জানা যায়, মওদুদ আহমদ স্থানীয় উপজেলা কমিটি পূনঃগঠন করবেন বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমোতি নেন। কিন্তু মওদুদ আহমদ কমিটির পূর্ণঃগঠন না করে উপজেলা কমিটিকে পাশকাটিয়ে পুরো কমিটি পরিবর্তন করে পৌর কমিটিকে উপজেলা বিএনপি কমিটি, যুবদলকে পৌর বিএনপি এবং উপজেলা ছাত্রদলকে যুবদল বলে নিজ প্যাডে ঘোষণা দেন। যা আইনসিদ্ধ হয়নি বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমিটি আটকে দেন। মওদুদ আহমদের প্যাড কমিটি এখন জেলার কাছেও নেই কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। যার আর অনুমোদন পাওয়ার সম্ভবনাও নেই। ফলে জেলা কমিটি উপজেলার নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া পর্যন্ত আগের কমিটিকে কাজ করার মুখিক নির্দেশ দেন।

এক উপজেলায় বিএনপির দুই কমিটি এই নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও কম হয়নি। আর এই সুযোগটিই নেন ব্যবসায়ী নেতা ফখরুল। উপজেলা কমিটি ছাড়া অন্য কমিটি নিয়ে কোনো কথা না বললেও দলের উপজেলা কমিটিতে পদবঞ্চিত ও অবহেলিত বিএনপি নেতারা ফখরুলের রাজনীতির পালে বাতাস লাগাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে গুটি কয়েক নেতা ছাড়া উপজেলার বিরাট অংশটি ফখরুলকে সমর্থন করতে থাকে।
আর এই নিয়ে পানি দিনকে দিন ঘোলা হতে থাকে। অবশেষে ফখরুলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে হিংসাত্মক কর্মসূচী নিতেও পিচপা হয়নি হতাশাগ্রস্ত অননুমোদিত কমিটির নেতারা। তাদের হিসাব হলো ফখরুল চলমান রাজনীতিতে সফল হলে তারা রাজনীতিতে এতিম হয়ে যাবে।

এ হতাশার বহিঃপ্রকাশ ফখরুলের বাড়ি ভাঙচুর। এ ভাঙচুরে মওদুদ বিরোধী আরেকটি গ্রুপ এ আগুনে পুয়েল দিতে দেরি করেনি। তারা বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ঘটনাকে লক্ষে পৌছে দেয়। তাদের হিসাব বাঘ মারতে শত্রুকে পাঠালাম। বাঘ মরলেও ভালো, শত্রু মরলেও ভালো।

বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, সেদিন যুবদল নেতা সামছুদ্দিন হায়দার, খালেদ সাইফুল্লাহ ও সোহানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের মওদুদ সমর্থকদের একটি গ্রুপ লাঠি ও রড নিয়ে বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলামের বাড়ীতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তার বাড়ীর কাঁচের দরজা ও একটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী বেরিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

এছাড়াও সে সময়ে ফখরুলের বাড়িতে উপজেলা বিএনপি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা বসুরহাট পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘরোয়া পরিবেশে এক আলোচনারত ছিলো। ভিতরে দলের নেতাদের দেখে আক্রমনকারী কর্মীরা পালাতে থাকে। সেসময়ে সবাই আক্রমণকারীদের চিনে পেলে।

মওদুদ ফখরুল গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বিএনপি নেতা ফখরুলের বাড়িতে মওদুদ সমর্থকদের হামলার পর মাঠ পর্যায়ে সকল নেতাকর্মীরা ফখরুলের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন এবং মওদুদ গ্রুপের এই কাজের প্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ে ফখরুলের সমর্থন আগের থেকে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে যার প্রমাণ মিলেছে উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতার বক্তব্যে।

প্রবাদ আছে আল্লাহ যারে দেয় ছফ্ফর ভরে দেয়। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। যে ফখরুল অনেক পরে হয়ত এমন সুযোগ পেতেন, সেটা মওদুদপন্থীদের উগ্রতায় একযুগ আগেই পেয়ে গেলেন।

২৪ সেপ্টেম্বর মওদুদ আহমদের বাড়িতে বিএনপির কথিত সভাপতি কামাল চৌধূরী ঘোষণা দেন ফখরুলের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেয়া হবে। যা সামাজিক মিডিয়ায় এখনও ভাসমান। ঘোষণা আর ঘটনা মিলে যাওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে একযুগ এগিয়ে গেলেন ফখরুল।

এদিকে ফখরুলের বাড়িতে হামলা নিয়ে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মামলা হলেও মওদুদ গ্রুপের অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ার কারনে তাদের মামলা থানায় গ্রহণ করেনি। অপরদিকে ফখরুল গ্রুপের অভিযোগের পর এফআইআর হয়ে মওদুদ গ্রুপের ১১ জনের নামে মামলা হলেও মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তারা অগ্রীম জামিন নিয়ে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পৌর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মামলার ৭নং আসামী আব্দুল্লাহ সোহান। তবে হায়দারসহ অনেকে এখন ফোন করে ফখরুল ও সিকদারের কাছে মাপ চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সার্বিকভাবে মওদুদ গ্রুপের বোকামির কারনে, হিংসার রাজনীতিতে জাতীয় নেতা মওদুদ আহমদকে টেনে এনে ফখরুলের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলো মোটা বুদ্ধির মানুষ কামাল চৌধুরী। ফলে স্থানীয় জনপ্রিয়তা এবং অবস্থান মওদুদের সমকক্ষ হয়ে পড়ে ফখরুলও।

এই ব্যাপারে কামাল চৌধুরীকে মুঠো ফোনে জিঞ্জেস করলে তিনি বলেন, এটা তাদের টাকা ভাগাভাগির জের। তবে কামাল চৌধুরীর বচনভঙ্গি বলে দিচ্ছিলো তার কথাটি সত্য নয়।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ীতে মওদুদ ঘোষিত কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমাকে প্রতিহত করার জন্য একটি রেজুলেশন তৈরি করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪ঘণ্টা যেতে না যেতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ইন্দনে কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান রিপনের নির্দেশে মওদুদ ঘোষিত স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সামছুদ্দিন হায়দার ও সাবেক কাউন্সিলর নুর নবী সবুজের ছেলে সোহানের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। হামলাকারীদের অনেকে এখন মাপ চেয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে চান।

scroll to top