ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল রবের জেএসডির পর এবার ভাঙলো কামালের গণফোরাম

dr.-kamal.jpg

মকছুদের রহমান মানিক ::

ভেঙে দুই ভাগ হলো ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল ড. কামলের গণফোরাম। এর আগে গত বছরের শেষের দিকে ভেঙ্গেছে ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক দল আসম রবের জেএসডি। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আসম রব ২০০১ সালে জাসদ থেকে বেরিয়ে রব জাসদ নামে ব্যাকেট বন্ধি জাসদ করতেন। পরে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাদকতায় রবের দলের নাম পান জেএসডি। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আসম রব নিজের প্রতিষ্ঠা করা দল জাসদ, মার্কা মশাল, অফিস সবই হারিয়েছেন। পরে ২০১৮ সালের জাতীয়  নির্বাচনের আগে কর্ণেল তাহেরের খুনীদের সাথে গড়ে তোলেন ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির পরে ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক হলো ড. কামলের গণফোরাম ও আসম রবের জেএসডি। সময়ের ব্যবধানে আজ তারা চার ভাগ।

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের  এক বছের মধ্যে ভাঙলো আসম রবের জেএসডি। আর গত ২৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙলো ড. কামলের গণফোরাম।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর দুই ভাগে বিভক্ত হলো দলটি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ তিন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে দলটি থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশ আগামী ২৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের বর্ধিত সভায় এ কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়া হয়। বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম প্রমুখ।

গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে ২৬ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভার ছবি

গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর ডাকা বর্ধিত সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সে মোতাবেক ২৬ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভায় তারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

২৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভায় গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ বলেন, বর্ধিত সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও গণমুখী করার লক্ষ্যে আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় কাউন্সিলকে সফল করার লক্ষ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

২৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে গণফোরাম নামে আরেকটি দল গঠন করতে যাচ্ছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ২৬ ডিসেম্বরের কাউন্সিলে উপস্থিত ডেলিগেটদের মতামত নিয়ে নতুন দলের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।

ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি-না, জানতে চাইলে মন্টু বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে আসবেন। বিতর্কিত লোকদের পরিহার করবেন। মাঠের পোড় খাওয়া লোকদের নিয়ে এগিয়ে যাবেন। তিনি না এলে তার বহিষ্কারের বিষয়ে আমাদের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেব। সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা আসবেন, তাদের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

গণফোরাম তো বিএনপির নেতৃত্বধীন ঐক্যফ্রন্টে আছে, আপনারা তাহলে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কি-না, জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। সামনে আমাদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা আছে, সেখানে সিদ্ধান্ত নেব।

ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত ছিল না। আমি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব না বলেছিলাম কামাল হোসেনকে। কিন্তু তিনি যেহেতু দলের সভাপতি ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নির্দেশে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ আমি তার আদেশ অমান্য করতে পারি না সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। সেই নির্বাচন কীভাবে আগের রাতে হয়ে গেছে আপনারা সবাই জানেন।

অর্থবহ পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণফোরাম জাতীয় ঐক্য চায় বলেও মন্তব্য করেন মন্টু। বর্ধিত সভায় গণফোরামের কতো জেলার প্রতিনিধি ছিলেন, জানতে চাইলে দলটির সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের সঙ্গে গণফোরামের ৫২ জেলার ২৮৩ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

scroll to top