কাজী আরেফ আহমেদ স্মরণে জাসদের আলোচনা সভায় হাসানুল হক ইনু এমপি।
নগর প্রতিবেদক :
কাজী আরেফ আরেফ আহমেদ বাঙালি রাজনীতির ইতিহাসে একটি বাতিঘর। কাজী আরেফ আহমেদ বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্রান্তি লগ্নে কায়েকটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় বদলকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। ৬০ দশকে যখন জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিলো, পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ, ইসলামী জাতীয়তাবাদ, না বাঙালি জাতীয়তাবাদ, কোন পথে যাবে? তখন কাজী আরেফ আহমেদ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। কাজী আরেফ আহমেদের ২৪তম হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ আয়োজিত আলোচনা সভার বক্তব্যে বলেন, জাসদ সভায় হাসানুল হক ইনু এমপি।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। সভাপতির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি কাজী আরেফ আহমেদ এবং শহীদ লোকমান হোসেন, শহীদ ইয়াকুব আলী, শহীদ ইসমাইল হোসেন তপসের, শহীদ সমসের মন্ডলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী সংগঠক, জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী গণআন্দোলনের নেতা, সামরিক শাসন বিরোধী ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা, সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠন ও গণআন্দোলনের নেতা রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার শহীদ কাজী আরেফ আহমেদের ২৪তম হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
যখন প্রশ্ন দেখা দিলো, পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার অর্জন, নাকি পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙ্গে বাঙালি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা? কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পথে পরিচালিত করতে এগিয়ে যান।
সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে যখন প্রশ্ন দেখা দিলো, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন, নাকি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার গঠন? তখন কাজী আরেফ আহমেদ বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করলেন।
বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পরিত্যাগ করে জাসদ গঠন করেছেন।
যখন প্রশ্ন দেখা দিলো, সংবিধান লংঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক শাসকদের সাজানো বানানো গণতন্ত্র চর্চা হবে, নাকি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসকদের উচ্ছেদ করা হবে? কাজী আরেফ আহমেদ গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসকদের উচ্ছেদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
যখন প্রশ্ন দেখা দিলো, জাতীয় ঐক্যের নামে রাজাকারদের মাপ করে দিয়ে রাজাকারদের সাথে মিলেমিশে তথাকথিত শান্তির পথে থাকা, নাকি রাজাকারদের বিচার করা, রাজনীতির মাঠ থেকে উচ্ছেদ করা হবে? কাজী আরেফ আহমেদ মাঠ থেকে উচ্ছেদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলেন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থানের বিশ্বাসঘাতকতা করে খুনী মোস্তাক ও জিয়া যখন স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা শুরু করে তখন কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিরোধকে অমোচনীয় অমীমাংসের রাজনৈতিক বিরোধ হিসাবে চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব বিনির্মাণ করেন এবং অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন।
জনাব ইনু বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ তার দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি বিপদ। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপদ। রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিরপদ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের চলমান রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তানপন্থী সকল সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ছোবল মারছে। আঘাত হানছে। বিএনপি ও এর রাজনৈতিক সঙ্গীরা নির্বাচনকে ঢাল বানিয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি পথে নিতে দেশে সংবিধান বিরোধী ভুতের সরকার আনতে চাচ্ছে।
জনাব ইনু বলেন, ভুতের সরকার আনার অপরাজনীতি বন্ধের মন্ত্র ও কবজ সংবিধানেই আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর কোন দিনই ভুতের মত উল্টা দিকে হাটবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সোজা পথে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি পথেই দৌঁড়াবে।
জনাব ইনু বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানই বাংলাদেশের রাজনীতির একমাত্র পথ। সংবিধানের পথ থেকে বিচুৎ করার অপরাজনীতি রুখে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুফল ঘরকাটা ইঁদুর উই পোকারা যেন খেয়ে না ফেলতে পারে তার জন্য ঘরকাটা ঈঁদুর উইপোকা দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের বিষ দিয়ে মারতে হবে এবং বৈষম্যের অবসানে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, মীর হোসাইন আখতার, সহ-সভাপতি ফজলুর হমান বাবুল, কাজী আরফে আহমেদের অনুজ কাজী মাসুদ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, জাসদের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, মোঃ মোহসীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি হাজী ইদ্রিস বেপারী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমূখ।