বিশেষ প্রতিবেদক ।।
অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন কারা এবং যাদের কারণে দেশ ও সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে তাদের খুঁজছে দলটি। রিজেন্টের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। সাহেদদের মতো আরো কোনো সাহেদ দলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে কি না তাও আওয়ামী লীগ খতিয়ে দেখছে বলে সূত্র জানায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভেতর অনুপ্রবেশকারী নিয়ে একের পর এক সংকটে পড়ছে। মহান স্বাধীনতার নেতৃত্ব প্রদানকারী ও ইতিহাস ঐতিহ্যে ধারক-বাহক রাজনৈতিক দলটির সব ভালো কাজ ও অর্জনকে শেষ করে দিচ্ছেন এই অনুপ্রবেশকারীরা।
দলের একাধিক নেতা জানান, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে বিভিন্ন সময় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের ঢল নেমেছিল। পরবর্তী সময়ে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ফলে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেয়া হয় অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করার জন্য। কিন্তু তখন এ নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব টিমের তত্ত্বাবধানে দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলকে সুসংগঠিত ও ‘হাইব্রিড’মুক্ত করতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে সভাপতি দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এসব অনুপ্রবেশকারীকে এখনই দলের পদ-পদবি থেকে বাদ দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশও দেন দলীয় সভাপতি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন কোনোভাবেই দলে অনুপ্রবেশ না ঘটে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনার কারণে চলমান অভিযানে কিছুটা ভাটা পড়লেও অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন অপকর্ম থেমে থাকেনি। বরং করোনা মহামারীকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। করোনা-মুক্তির ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন অনেকেই।
আওয়ামী লীগের গত আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির ২৪ নং সদস্য ছিলেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান বিতর্কিত মো. সাহেদ করিম। তিনি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গায় করেছেন প্রতারণা। এর আগেও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা প্রতারণার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন বলে নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে অনেককে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবের ওপর তদন্ত করলেই সাহেদদের মতো প্রতারকদের সহজেই খুঁজে বের করা যাবে। যাদের অর্থের বিনিময়ে সংগঠনের সদস্য বানিয়েছিলেন। বর্তমানে উপ-কমিটি নেই। তবে কমিটির জন্য খসড়া কমিটি জমা দেয়া আছে। সেই খসড়া কমিটিগুলো আবার যাছাই-বাছাই করা হবে। তাদের মধ্যে সাহেদদের মতো কোনো রাঘব-বোয়াল পেলে সেই উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবকেও জবাব দিতে হবে। এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ পেলে ভবিষ্যৎ রাজনীতি তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য সব উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও নজরে রাখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সাহেদ আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন এটা শুনেছি। তবে তাকে পার্টি অফিসে কখনো দেখিনি। আসলে সে ছিল কি না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবকে শোকজ করা হতে পারে।’
অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান স্পষ্ট’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অপরাধীর দলীয় পরিচয় কিংবা ক্ষমতাবান হলেও ছাড় দেয়া হবে না। শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়, যেকোনো খাতের অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মিডিয়াকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীরা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দলকে বিতর্কিত সৃষ্টি করছে। আমাদের নীতি হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। সাহেদদের মতো প্রতারকদের পৃষ্ঠপোষকদেরও খুঁজে বের করা হবে। তাদের চিহ্নিত করা হবে। এ ধরনের প্রতারকরা দলের নাম ভাঙিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এদের কারণে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও বিব্রত।’