প্রতীকী ছবি
বিশেষ প্রতিনিধি :
গত বছরের ৯ মার্চ রাতে পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে হত্যার উর্দেশ্যে পৌর ভবনের ২য় তলাকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা দু’হাজার গুলী করে বলে মেয়রের দাবি। এরপর থেকেই বার বার বিভিন্ন বক্তব্যে মেয়র এসব অস্ত্রবাজিদের গ্রেফতার করার দাবি জানান। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন অস্ত্রবাজ গ্রেফতার করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন এমনটাই দাবি মেয়রের।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউপি নির্বাচনের পূর্বে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের আভিভাবক আবদুল কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জের অস্ত্রধারীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বার বার প্রশাসনকে অনুরোধ করলেও কোন ফল না পেলে পরে নিজস্ব ফেইসবুক আইডি লাইভে এসেও এই বিষয়ে বক্তব্য দেন।
এখন ইউপি নর্বাচন পরে মেয়র একাধিক সমাবেশে বলছেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আনীত অস্ত্র ইউপি নির্বাচনে ব্যবহার করে তাষ অনুসারী চেয়ারম্যন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চেয়ারম্যানদের জয় চিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিত কোম্পানীগঞ্জের ইউপি নির্বাচনে এসব অস্ত্রবাজরা উপজেলার চরপার্বতি, চর কাঁকড়া, রামপুর, চর ফকিরা ও চর এলাহীতে কাডে লাগিয়ে ভোটার ও মির্জা অনুসারী চেয়ারম্যান প্রর্থীর মাঠকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাপ্রাশিরহাটে সাংবাদিক মোজাক্কির হত্যা, ৯ মার্চ পৌর ভবনে মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার গুলী এবং সিএনজি চালক আলাউদদিন হত্যা, এরপর ১৩ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে একাধিক অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেছে।
এসব অস্ত্রবাজির ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। অনেকের মতে কোম্পানগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে শতাধিক অস্ত্রবাজ রয়েছে। যাদের স্থানীয় জনগণ চেনেন ওজানেন। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে চান না। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে দুজন ধরেছে।
নানা সময়ে এসব ঘটনার পর মির্জা ও বাদল অনুসারিরা মামলাও করাছে। কিন্তু মাসের পর মাস গেছে কিন্তু চার অস্ত্রধারীদেরকে এখনো শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটা এসব ঘটনাতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা শতবাগ জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এসব ঘটনায় কবিরহাট, চর জব্বর,দাগনভুঞা, সোনাগাজীর চিহ্নিত অস্ত্রধারীরাও জড়িত ছিলো বলে মেয়র বার বার প্রকাশ্যে বলেছেন।
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকায় গত বছরের ১৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিঃস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের আর কাদের মির্জার অনুসারীদের অস্ত্র হাতে গুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে। যাহা সামাজিক মাধ্যমেও এসেছে। এদের মধ্যে দুই অস্ত্রধারী সহিদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাসেল (২৯) ও আনোয়ার হোসেন ওরফে পিচ্চি মাসুদ (২৬) কে পুলিশ গে্রফতার করেছে।
অপর দিকে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর জেলা শহর মাইজদীর জামে মসজিদ মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা ও স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শিহাব উদ্দিনের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি হামলা-ধাওয়ার ঘটনার সময় চারজনকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এছাড়া গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে উপজেলা সাবেক জাসদ ও বিএনপি বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের বাড়িতে হামলার ও গুলির ঘটনায় সময়ও অস্ত্র হাতে মুখোশ পরা দুই সন্ত্রাসীকে দেখা যায়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে খিজির হায়াত খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রধারীদের একজন মো. মানিক (৩০), আরেকজন পিচ্চি মাসুদ বলে শনাক্ত করেন। ওই ঘটনায় খিজির হায়াত খানের স্ত্রী বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি উপজেলার মুছাপুর এলাকা থেকে পিচ্চি মাসুদকে গ্রেপ্তার করে থানা-পুলিশের একটি দল।
বসুরহাটের ঘটনার চার মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে সিরাজপুর ইউনিয়নের লোহার পোল এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে কেচ্ছা রাসেলকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কিন্তু গ্রেপ্তার এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ রোমেন মিডিয়াকে বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দুই অস্ত্রধারী কেচ্ছা রাসেলের বিরুদ্ধে থানায় থাকা অস্ত্র মামলাসহ অন্যান্য মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আর পিচ্চি মাসুদকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনের শুনানি এখনো হয়নি।
অপর দিকে গত ৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনা প্রসঙ্গে সুধারাম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় (অস্ত্র হাতে গুলির) সম্ভবত কোনো মামলা হয়নি। আর কেউ শনাক্ত হয়ে থাকলে কিংবা ধরা পড়লে আমি জানতাম। মনে হয় এ রকম কেউ ধরা পড়েনি।’