ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীতে ডিম খাওয়ার অপরাধে পালিত শিশু কন্যাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে যখম করেছে দত্তক নেওয়া এক দম্পতি। শিশু নাজনিনকে শুধু পিটিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, মুমূর্ষু ও রক্তাক্ত অবস্থায় বুধবার রাতে ঘরের বাইরে ফেলে রাখে পালিত বাবা-মা। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের রামপুর সৈয়দ বাড়ি সংলগ্ন মোস্তফা কমিশনারের বাড়ির নিচতলা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় র্যাব। নির্যাতনের অভিযোগে পালক বাবা-মা জামাল উদ্দিন (৪৫) ও নাজমা আক্তারকে (৪০) আটক করেছে র্যাব।
র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. নুরুজ্জামান বলেন, শহরের জামাল উদ্দিন ও নাজমা আক্তার দম্পতি ৬ বছর পূর্বে ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের দরবারপুর গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের নানা-নানু কাছ থেকে কন্যা শিশু নাজনীনকে দত্তক নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বাচ্চাটিকে গৃহকর্মী (কাজের মেয়ে) হিসেবে পরিচালিত করে।
প্রতিনিয়ত নির্যাতন করলেও বুধবার রাতে একটি ডিম খাওয়াকে কেন্দ্র করে ফের নাজনীনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের বাহিরে বের করে দেয় দত্তক নেওয়া বাবা-মা। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত দম্পতি জামাল উদ্দিন ও নাজমা আক্তারকে আটক করে র্যাব।
নাজনীনকে উদ্ধারকারী প্রতিবেশী রুনা ইয়াসমিন জানান, শিশুটিকে নির্যাতন করে ঘরের বাইরে ফেলে রাখলে তার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নাজনিনকে তারা নিজেদের ঘরে এনে রাখে। রাতে শিশুটির গায়ে প্রচন্ড জ্বর থাকায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ক্ষত স্থান হতে রক্ত বন্ধ করে।
অভিযুক্ত গৃহকর্তী নাজমা আক্তারের ভাই রিপন হোসেন জানান, ‘আমার বোনের চার ছেলে। মেয়ে নেই দেখে নাজনিনকে দত্তক নেয়। কিন্তু তারা প্রায় মেয়েটিকে মারধর করতো। মেয়েটিকে দত্তক আনা হলেও তারা কাজের মেয়ে হিসেবে থাকতে দিত। কোনোকিছু হলেই নির্যাতন করা হত। এমনকি কাজ শেষে ঘুমানোর জন্য নাজনিনকে বারান্দায় রাখা হত।’
অভিযুক্ত গৃহকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে তিনি কর্মহীন। তবে পূর্বে তিনি শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানে অপু ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. ইকবাল হোসেন ভূইয়া জানান, নির্যাতিত শিশুটির ঠোট কেটে ফুলে উঠেছে। তার সারা দেহে মারের দাগ ও কপালে পূর্বের নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে নাজনিনকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। তবে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম থাকায় যন্ত্রণা অনুভব করছে। তার শারীরিক অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে।
র্যাবের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মো. নুরুজ্জামান আরো জানান, নির্যাতিত শিশুটি সুস্থ হলে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আটককৃত দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আসামীদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে র্যাব।